এখন দেশের প্রকৃত রিজার্ভ কত জানা যায়।


স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩, ৭:০৭ অপরাহ্ন /
এখন দেশের প্রকৃত রিজার্ভ কত জানা যায়।

এক বছরে রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়নেআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণে ভর করে রিজার্ভ ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা দিয়ে ২০২৩ সালের শুরুটা বাংলাদেশের। কিন্তু আগের বছরের জের টানা চড়া মূল্যস্ফীতি এই বছরও ভুগিয়েছে সাধারণ মানুষকে। যার প্রভাব এড়ায়নি আমদানি রপ্তানিতেও, কমেছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব নানা সংকট সত্ত্বেও আর্থিক খাতের সংস্কার আর ব্যয় ব্যবস্থাপনাতেই আগামী বছরে আসতে পারে স্বস্তি।বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের কল্যাণে নিমিষেই নদীর নিচ দিয়ে পাড়ি দেয়া যাচ্ছে প্রমত্তা কর্ণফুলী। ট্রেনে চেপে ঢাকা থেকে সমুদ্রের শহর কক্সবাজারে যাওয়ার পথটা হয়েছে আরও সহজ। রাজধানী ঢাকার চিরচেনা যানজটকে খানিকটা পথ থেকে মুক্তি দিয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে ইতিহাস সৃষ্টি করা এসব মেগা প্রকল্প ডানা মেলেছে ২০২৩-এ। কিন্তু বাহ্যিক আবরণটা রঙিন হলেও অর্থনীতির ভেতরে যে অবিরাম রক্তক্ষরণ চলেছে বছরজুড়েই- তা বলতে দ্বিধা নেই অর্থনীতিবিদদের। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টাকা ও ডলারের বিনিময় হারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ইতোমধ্যে অনেক বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। সেগুলোর ফল তাৎক্ষণিক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আগামীতে সুফল মিলবে।আগের বছরের জের টানা চড়া মূল্যস্ফীতি ধাক্কা অব্যাহত রাখে ২০২৩-এর শুরু থেকেই। ফলে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর- এই ১১ মাসের গড় দাঁড়ায় সাড়ে ৯ শতাংশ। অথচ এক বছর আগেও তা ছিল ৭ শতাংশের নিচে। ফলে জিনিপত্রের দামের চাপে আরও পিষ্ট হয়েছেন সাধারণ মানুষ।ড. মোস্তাফিজুর বলেন, এরই মধ্যে মুদ্রানীতি সংকোচন করা হয়েছে। সুদের হার বাড়িয়ে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যতম বড় সূচকগুলোও এ বছর ভুগেছে নানামুখী সংকটে। যেমন, অর্থনৈতিক অস্বস্তিতে থাকা বড় দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় কেনাকাটা কমিয়েছেন ভোক্তারা। ফলে ১১ মাসে সব মিলিয়ে রপ্তানি আয় আসে ৫০ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে যা ছিল বেশ দূরে। রপ্তানির বাইরে বহির্খাতের আরেক উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহেও অস্বস্তি অব্যাহত ছিল চলতি বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, বছরের ১১ মাসে এই অংক দাঁড়ায় ১৯ বিলিয়ন ডলারে। অথচ আগের বছর একই সময়ে তা ছিল আরও খানিকটা বেশি। ফলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে প্রত্যাশিত আয় না আসায় ক্ষয় হতে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এক বছরেই যা ৩৪ বিলিয়ন থেকে কমে দাঁড়ায় ২৬ বিলিয়নে। যেখানে প্রকৃত ব্যবহার উপযোগী মাত্র সাড়ে ১৬ বিলিয়ন।অধ্যাপক মোস্তাফিজুর বলেন, ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন রোধে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানামুখী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়লে রিজার্ভ পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তি কিছুটা সুখবর দিলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। আর সেই ঋণ শর্ত পালনে একের পর এক অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয় সরকারকে। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, বিভিন্ন খাতে কর বসানো, ব্যাংকের সুদে পরিবর্তন- সবই ছিল অস্বস্তি, অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত ইঙ্গিত। ফলে চলতি অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার কমাতে বাধ্য হয় সরকার।পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের অর্থনীতি সেভাবে চাঙা ছিল। ফলে সম্পদ সংগ্রহ করতে হয়েছে। তাই শর্ত মেনে ধার করা হয়েছে। সেটা পরিশোধ করা যাবে বলেই এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন যেন আরও খানিকটা গতি পায় চলতি বছর। যা নিয়ন্ত্রণেও চরম অদক্ষতার পরিচয় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে খোলাবাজারের সাথে ব্যাংকের দরের পার্থক্য। কেবল তাই নয়, ডলার সংকটে সংকুচিত হয় আমদানি। যার প্রভাব পড়তে শুরু করে বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থানে।বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রিজার্ভে ধস, বহির্বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা, আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা-এই ৩ বিষয়ই এখন সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। এগুলোর সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। তাহলেই সুফল মিলবে।রাজস্ব আদায়েও নতুন কোনও আশার খবর ছিল না ২০২৩ সালে। বিদেশি ঋণ ছাড়ও কমে বাস্তবায়ন অদক্ষতায়। যে কারণে কমানো হয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা।